আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): গাজার ধ্বংসস্তূপে ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারির মধ্যে যখন দুর্ভিক্ষ আসন্ন, তখন ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণা সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একে হামাসের জন্য পুরস্কার বলে আখ্যায়িত করে। যুক্তরাষ্ট্রও এই স্বীকৃতির পরিকল্পনার নিন্দা জানায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে সাহের আল ঘোরা তার মতামতে বলেন, এ স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি হতে পারতো, যা দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিকভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যেই ছিল।
তিনি বলেন, সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিক আইনের মূল চালিকাশক্তি, আর তাই এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির একটি হাতিয়ার হতে পারতো।
তিনি তার মতামতে আরও বলেন, জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি জি-৭ এর সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, জাপান এবং ইতালি।
সম্প্রতি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং মাল্টা ঘোষণা করেছে, তারা সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। তবে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের ভিত্তিতে।
ফ্রান্স প্রথম জানায় তারা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
যুক্তরাজ্য জানায়, যদি ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় এবং আরও মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করে, তবেই স্বীকৃতি দেবে।
কানাডা বলেছে, ২০২৬ সালের মধ্যে হামাসবিহীন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের গণতান্ত্রিক সংস্কার আনতেই হবে।
অস্ট্রেলিয়া বলেছে, তারা এই স্বীকৃতি দেবে, যদি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কানাডার মতো সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই স্বীকৃতি খুব বিলম্বিত, শর্তসাপেক্ষ এবং অপর্যাপ্ত। বিশেষ করে এমন এক সময় যখন গাজায় হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, এবং বহু মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের কার্যক্রমকে গণহত্যা বলে অভিহিত করছেন।
এই স্বীকৃতি ঘোষণাগুলোর সঙ্গে এসেছে রাজনৈতিক শর্ত ও হুমকি
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেছেন, ইসরায়েল যদি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না করে, মানবিক পরিস্থিতি উন্নত না করে এবং শান্তিপ্রক্রিয়ায় অগ্রগতি না আনে, তাহলে তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবেন। অর্থাৎ এটি একটি চাপের কৌশল।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে হলে তাদের গণতান্ত্রিক সংস্কার, হামাসের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এবং একটি অসামরিক রাষ্ট্র গঠন নিশ্চিত করতে হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ খানিকটা নরম ভঙ্গিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি দিলেও, মাহমুদ আব্বাসকে রাজনৈতিক সংস্কারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
অর্থাৎ, স্বীকৃতি যেন উপহার নয়, বরং বিনিময়ের শর্ত।
ইসরায়েলের জন্য কোন শর্ত নেই?
সবচেয়ে তীব্র সমালোচনা এসেছে এই প্রশ্নে— ইসরায়েল যখন লাখ লাখ ডলার সামরিক সহায়তা পাচ্ছে, তখন তার ওপর কোনো শর্ত আরোপ করা হচ্ছে না কেন?
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক, গণহত্যা ও হলোকাস্ট গবেষক এবং বহু মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলেছে।
তবুও, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা বা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের বদলে, পশ্চিমা দেশগুলো এখন ফিলিস্তিনিদের একটি ‘রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে দায় সেরেছে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
Your Comment